Durbine Chokh Rakhbo Na, 2012
#১ রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপ (অক্টোবর ২০০৯)
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপ
ঢুকে গেছে বিষের মতো।
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপ
ঢুকে গেছে সাপের মতো।
তোমার আকাশ ভরা ধোঁয়া
তুমি পালাবে আর কতো?
ব্রম্ভানন্দের মন্ত্র মানো না
দেবানন্দের চিত্র দেখো না
গেলাসে, পাত্রে, টেবিলে, বোতলে
নেশা মাখছো প্রত্যেক আঙুলে
গা গা মা মা ধা ধা মা মা ...
নি ... মিএয়াও
বান্ধবীদের মন তো জানো না
চন্দ্রবিন্দুর গান-ও শোনো না
মেডিকাল বিলে করছো জালি
বাবার মুখে লেপছো কালি
গা গা মা মা ধা ধা মা মা ...
নি ... মিএয়াও
#২ তিস্তান ২ (এপ্রিল ২০০৫)
পাঁচ টাকা দিয়ে দিনের শুরু
ষোল টাকা দিয়ে শেষ
তিন টাকা দিয়ে মুক্তি কিনে
হব নিরুদ্দেশ।
তখন কেন হাত বাড়ালে, এখন কেন চুপ?
তখন কেন জ্বাললে আলো, এখন পোড়াও ধূপ।
আর এখন তুমি নিচ্ছ অন্য রূপ।
আর এখন অলমোস্ট পাগোল এ মন
বিষ পানে অভ্যস্ত এ জীবন
শূন্য দু হাত আবার চাইছে
ফিরিয়ে নিয়ে চলো ...
তিস্তানে ...
মাসটা যখন ফুরিয়ে যাবে
ওরা দেবে অনেক টাকা
তবু মাসের শেষেই মনে হবে
ভেতরটা খুব ফাঁকা
সময় যখন আটকে রাখবে সময় চলবে না
যখন সময় অনেক দরকার সময় থাকবে না
তখন সময় তোমার পাশে নেই
আর এখন অলমোস্ট পাগোল এ মন
বিষ পানে অভ্যস্ত এ জীবন
শূন্য দু হাত আবার চাইছে
ফিরিয়ে নিয়ে চলো ...
তিস্তানে ...
যখন বলেছিলাম আমি চলে যাব, তখন কেন কাঁদোনি
একের পর এক ভুল করেছি, তবু কেন আটকাওনি
যতক্ষণ তুমি জিতছো, প্রত্যেকটা মানুষ তোমার সাথে
তুমি একবার হেরে যাও আর কেউ নেই তোমার পাশে।
তখন কেন হাত বাড়ালে, এখন কেন চুপ?
তখন কেন জ্বাললে আলো, এখন পোড়াও ধূপ।
আর এখন তুমি নিচ্ছ অন্য রূপ।
আর এখন অলমোস্ট পাগোল এ মন
বিষ পানে অভ্যস্ত এ জীবন
শূন্য দু হাত আবার চাইছে
ফিরিয়ে নিয়ে চলো ...
তিস্তানে ...
#৩ বিজলি বাতি (জুলাই ২০০৬)
আমার দিন ফুরালে বিজলি বাতি
কলম খোঁচায় গল্প পাতি
তোমার শব্দে মাতামাতি
মেঝেয় পিঁপড়ের চড়ুইভাতি।
বাইরের ঘরে আগুন গিলছে প্রাচীন ভূত
প্রলাপ বকছে চীনের রাষ্ট্রদূত
টিভি-র পর্দায় সব কিছুই প্রস্তুত।
আমার বই-এর তাকে জমছে ধুলো
পথ হারাচ্ছে শব্দগুলো
হঠাৎ তোমার কপাল ছুঁলো
নাড়লে কড়া দরজা খুলো।
হাল্কা পায়ে ভাঙছে সিঁড়ি তোমার গান
চামচ মাপছে চিনির পরিমান
দেওয়ালে ঝুলছে আমার অভিমান।
আমার দিন ফুরালে বিজলি বাতি
কলম খোঁচায় গল্প পাতি
তোমার শব্দে মাতামাতি
মেঝেয় পিঁপড়ের চড়ুইভাতি।
#৪ উড়ে যাক (সেপ্টেম্বর ২০০৭)
উড়ে যাক এ ঘুম আমার
ছুঁতে শ্বেত পাথরের রাত
জানি পায় না কাছে কিছু
আমার শূন্য দুটি হাত।
ভরে যাক এ ঘর আমার
এক দীর্ঘ স্তব্ধতায়
ভেসে যাক এ রাত এ সময়
দারুণ অবাধ্যতায়।
আড়ালে রেখেছো প্রেমিকের গভীরতা
অথবা সরিয়ে রেখেছো সে দীনতা
হারিয়ে গিয়েছি বই-এর ভেতরে
পাতার প্রথমে অক্ষর হয়ে
আলমারি তাকে আমায় খুঁজে পাবে না
খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কুড়িয়ে নিয়েছ শিউলি সকাল ফুলে
অথবা দু পাশ ভরিয়ে রেখেছ ভুলে
উঠোন পেরিয়ে কলপাড় হয়ে
জামার হাতায় কপাল ভিজিয়ে
কোনদিন ভালোবাসার স্পর্শ রাখোনি
কোন স্পর্শ রাখোনি।
#৫ আলস্য (মার্চ ২০০৫)
সেই গ্রীষ্মের সকালগুলোতে
পর্দা ঠেলে সরিয়ে
হাওয়া দিল ভাসিয়ে
হাওয়া দিল ভাসিয়ে
তখন আমার এ বিছানা ঘুম
ছাড়েনি চোখের কোল
আর হাওয়াতে লাগালো দোল
হাওয়াতে লাগালো দোল
তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
যেন তুলো সেজে আকাশ পথে দিতে হবে পাড়ি
তুমি আঁচল পেতে রাখো না
আমি আসছি চলে
তুমি চোখ বুঁজো না, বুঁজো না
আমি এলাম বলে।
এখনো সময় অনেক বাকি, ও ও ও ও ও ও ...
আমার মনের এ গোপন পথে
আজও সে বাউন্ডুলে
চোখ রেখে কাটা ঘুড়িতে
হঠাৎ যায় হারিয়ে
আমার মনের গভীরতাকে
অনুভূতির আঙুলে
স্পর্শ করে দেখোনি
স্পর্শ করে দেখোনি
তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
যেন তুলো সেজে আকাশ পথে দিতে হবে পাড়ি
তুমি আঁচল পেতে রাখো না
আমি আসছি চলে
তুমি চোখ বুঁজো না, বুঁজো না
আমি এলাম বলে।
এখনো সময় অনেক বাকি, ও ও ও ও ও ও ...
#৬ কাকা (জুলাই ২০০৭)
ফ্যাসাদে পড়লে কাকা আমাকে ডেকো
গভরনমেন্ট পালটি খেলে সাবধানে থেকো
তিন ছক্কা পচে গেলে, কপালে লেখা পুট
বান্ধবী ভেগে গেলে, রাত জেগে অরকুট
ডালপুরি জুটবে না পাঁউরুটি শেঁকো।
লোকচক্ষের আড়ালে মাদুলি বাবার নাম, কাকা, কাকা ...
টিউশানি ঘুরে ঘুরে মাথায় ওঠে পায়ের ঘাম, কাকা, কাকা ...
বাঙালী হলে কাকা কালচারের ঝাপটা
বৈশাখের পঁচিশ এলে এস এম এসে চ্যাপ্টা
ফ্যাতাড়ু উড়ে গেল, হারবার্ট দা শ্মশানে
খেলাধুলা ছেড়ে খোকা মন দিল ফ্যাশানে
সব জায়গায় ক্যাঁচাল কাকা, নয় সোজা সাপটা।
মাত্রাধিক কাফ সিরাপে হাল্কা হ্যালু হয়, কাকা, কাকা ...
ভাসানে নাচতে গেলে এই নেশা মন্দ নয়, কাকা, কাকা ...
তুমি সব-ই বোঝ শুধু ঘুমের ভানে ভুলে থাকতে চাও
তবু ওদের হাতে নিজের জীবনের চাবি তুলে দাও।
#৭ বেঁচে থাকার গান (ডিসেম্বর ২০০৮)
যদি ফেলে দিতে বলে ঘোলা জলে গোলা তুলি
জেনো আমি কুড়িয়ে নেব তা।
যদি খুলে নিতে বলে দু পায়ে বাঁধা ঘুঙ্গুর
জেনো আমি খুলতে দেব না।
আর, আমি আমি জানি জানি
চোরাবালি কতখানি
গিলেছে আমাদের রোজ
আমি আমি জানি জানি
প্রতিরাতে হয়রানি
হারানো শব্দের খোঁজ।
এভাবেই নরম বালিশে, তোমার ওই চোখের নালিশে
বেঁচে থাক রাত পরীদের স্নান
ঠোঁটে নিয়ে বেঁচে থাকার গান।
এভাবেই মুখের চাদরে, পরিচিত হাতের আদরে
সুখে থাক রাত পরীদের স্নান
ঠোঁটে নিয়ে বাঁচিয়ে রাখার গান।
যদি কেড়ে নিতে বলে, কবিতা ঠাসা খাতা
জেনো আমি কাড়তে দেব না।
যদি থেমে যেতে বলে, পিয়ানো, বাঁশি, গিটার
জেনো আমি থামতে দেব না।
#৮ আমাকে আমার মতো (মে ২০০৯)
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলো না ছিলো না, সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন।
তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোর
কিছু সন্ধ্যার গুঁড়ো হওয়া কাঁচের মতো
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও
আমি দূরবীনে চোখ রাখবো না, না, না, না।
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার, তবু গল্প লিখছি বাঁচবার,
আমি রাখতে চাই না আর তার, কোনো রাত দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বারবার, সাঁতরে পাড় খোঁজার।
কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে
যদি নেমে আসে ভালোবাসা খুব ভোরে
চোখ ভাঙা ঘুমে তুমি খুঁজো না আমায়
আশে-পাশে আমি আর নেই।
আমার জন্য আলো জ্বেলো না কেউ
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ
এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না, না, না।
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার, তবু গল্প লিখছি বাঁচবার,
আমি রাখতে চাই না আর তার, কোনো রাত দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বারবার, সাঁতরে পাড় খোঁজার।
তোমার রক্তে আছে স্বপ্ন যতো
তারা ছুটছে রাত্রিদিন নিজের মতো
কখনে সময় পেলে একটু ভেবো
আঙুলের ফাঁকে আমি কই?
হিসেবের ভিড়ে আমি চাইনা ছুঁতে
যতো শুকনো পেঁয়াজকলি ফ্রিজের শীতে
আমি ওবেলার ডাল ভাতে ফুরিয়ে গেছি
গেলাসের জলে ভাসবো না, না, না, না।
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার, তবু গল্প লিখছি বাঁচবার,
আমি রাখতে চাই না আর তার, কোনো রাত দুপুরের আবদার।
তাই চেষ্টা করছি বারবার, সাঁতরে পাড় খোঁজার।